• বিভাগঃ রাজশাহী
  • জেলাঃ জয়পুরহাট
  • উপজেলাঃ পাঁচবিবি
  • পৌরসভা/ইউনিয়নঃ আটাপুর

জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার আটাপুর ইউনিয়নের শিউলী সরেন (৩৫), তাঁর স্বামী মিলন টুডু (৪১), এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার গড়েছেন কলন্দপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে। এই প্রকল্পে তার সাথে আরও ২৯ টি পরিবার বসবাস করছে।

মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ ঘর পাওয়ার আগের কথা জানতে চাইলে ছলছল করে উঠে শিউলী সরেনের চোখ। মানুষের বাসায় আশ্রিত হিসেবে থেকে;কখনো খেয়ে, কখনো নাখেয়ে কীভাবে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতেন তা বলতে বলতে এক সময় হুহু করে কেঁদে ফেলেন তিনিস্বামী দিন-রাত খেটে যা উপার্জন করতেন তা দিয়ে ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও পরিবারের সদস্যদের পেটভরে খাবার যোগানো সম্ভব হতো না, সঞ্চয় তো দূরের কথাতাঁদের ছেলে মেয়েদের কোন আবদার কখনো পূরণ করতে সক্ষম হননি। শীতের রাতগুলোতে খোলা আকাশের নিচে পাতলা কম্বলে শরীরে ঢেকে কোনমতে রাত কাটাতে কাটাতে স্বপ্ন দেখতেন একটি চিরস্থায়ী শান্তি সুখের নীড়ের। আদিবাসী পল্লীর শিউলীসরেন দিন রাত শ্রম দিতেন ভাত ও থাকার বিনিময়ে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে।

 

কান্নাসিক্ত কন্ঠে শিউলীসরেন বলে ওঠেন,“মানুষের ক্ষুধা ও থাকার যন্ত্রণা যে কত কষ্টের তা সেই বুঝে। ছোট বেলায় আমার বাবা মা মারা যাওয়ার পর থেকেই আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবনযাপন করেছিপরবর্তীতে আমার বিয়ে হয় এক গরীব পরিবারে। আমাদের ছিলোনা কোন থাকার জায়গা,ছিলোনা খাওয়ার জন্য কোন চাল, ডাল। বিবাহিত জীবনের করুণ অধ্যায় তখন চলছে, কেটেছে আমার কষ্টের জীবন।যখন আমি দুই সন্তানের জননী হই,তখনও কষ্টের সীমা থাকে না।

 ২০২১ সালেরএক সন্ধ্যায় পাঁচবিবির উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যার হঠাৎ আমার থাকার জায়গায় আসেন। তখন আমি মাত্র মাঠে কাজ শেষে বাড়ি পৌঁছেছি। স্যারকে দেখে ভয়ে আমার শরীর যেন থরথর করে কাঁপছিলো!আশ্বস্ত করে স্যার আমার কুশলাদিও পরিবারের সদস্যদের কথা জিজ্ঞাসা করলেন। পরে তিনি বললেন, পাশে একটি ঘর করে দিলে আপনি থাকবেন তো? আমি তাড়াতাড়ি করে বলে উঠলাম, থাকবো স্যার। স্যার আমাকে আশ্বাস দিয়ে বললেন, ঠিক আছে আপনাকে একটি ঘর দেওয়া হবে। আমি অভিভূত হয়ে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে শাড়ির আঁচল মুখে দিয়ে বললাম, আমার আশ্রয় স্থান করে দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ স্যার। স্যার তখন বললেন, আরে আপনি কান্না করছেন কেন? আমাকে ধন্যবাদ দেবার কিছু নেই। আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান, ইনশাআল্লাহ আপনার ভাগ্য আজ বদলে যাবেআমি কাঁদতে কাঁদতেই স্যারকে বলে উঠলাম, আমি তো কখনো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কাছে থেকে দেখতে পাবো না, তবুও আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আর এখন আমি মুরগি-হাঁস, ছাগল ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রাণীসম্পদ দপ্তর হতে বিনামূল্যে দেওয়া গরু নিয়ে সুখী, সুন্দর জীবন যাপন করছি।