• বিভাগঃ ময়মনসিংহ
  • জেলাঃ জামালপুর
  • উপজেলাঃ দেওয়ানগঞ্জ
  • পৌরসভা/ইউনিয়নঃ ডাংধরা

জীবন সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীতে বেচে থাকার তাগিদে মানুষ দিগ-বিদীগ ছুটে চলে ক্ষণস্থায়ী আলোর পথে পথে  চলতে হতে হয় হাজারো বাধা বিপত্তির সন্মুখীন মরুভূমিতে যেমন বালিরাশি কন্টকময় তরুলতা ছাড়া অন্য কিছুর আশা করা যায় না, তেমনি দরিদ্র, অবহেলিত, অত্যচারিত মানুষের জীবন এর ব্যাতিক্রম নয়আর দরিদ্রের সকল উপসর্গ নিয়ে জন্ম নেয়া এক নিগৃহীত মানুষের নাম সাইমনি জন্ম নিয়েছিল এক দরিদ্র ভূমিহীন পরিবারে সাইমনি এর বাবা তের বছর বয়সে সাইমনি কে বিয়ে দেয় এক পাশের গ্রামের দরিদ্র কৃষক ছলিমউদ্দিন এর ছেলে মহির এর সাথে বিয়ের পরেই হতভাগী সাইমনির বাবা-মা দুজনেই মারা যায়সাইমনি শেষ ভরসা হিসেবে আশ্রয় নেয় স্বামী মহিরের সংসারেমহিরের সংসার ছিল চরম অভাব অনটনের সাইমনিকে বিয়ে করে কিছুদিন ভালোই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন দম্পতির ঘর আলো করে আসে এক কন্যা সন্তান কিন্তু কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ায় মহির ভীষণ বিরক্ত কারণ মহির চেয়েছে তার একটা ছেলে হবে ছেলে বড় হয়ে তার সাথে মাঠে কাজ করে, টাকা-পয়সা রোজগার করবে, তার সংসারে অভার দূর করবে পরিত্রাণ পাবে মহির, সুখে কাটাবে বাকি জীবনমেয়ে তার কিছুই করতে পারবে না তাই মহির তার মেয়েকে সংসারে অভিশাপ ভাবে কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার দায় মহির এবং তার পরিবার সাইমনি এর উপর চাপিয়ে দেয়মহির সাইমনির সাথে শুরু করে অত্যাচার সাইমনির কাছে বাপের বাড়ী থেকে টাকা-পয়সা দাবি করে হতভাগী সাইমনি টাকা দিবে কোথা থেকে? কারণ তার একমাত্র ভাই বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছেবাড়ীতে নেই কিছু সাইমনি টাকা দিতে অপারগতা জানায় মহিরকে মহির ক্ষিপ্ত হয়ে সাইমনিকে শারীরিক ভাবে প্রহার করে মহিরের নির্যাতনের মাত্র্রা দিনদিন বাড়তে থাকে একদিন মহির সাইমনিকে তালাক দিয়ে বাড়ী থেকে বের করে দেয় সাইমনির স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার করার সকল স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় যাবে কোথায়, মাথা ঘোজার রইল না কোথাও না আছে বাপের বসতি ভিটা না রইল স্বামীর বাড়ি দিন শেষে সন্ধ্যা গনিয়ে এল, রাতের আধারে যাবে কোথায় কোথাও হল না ঠাই, গ্রামের পুকুর পাড়ের গাছতলায় আশ্রয় নিল সাইমনি ভীত সনতপ্ত  নির্ঘুম রাত কেটে গেল, উদিত হল রবি কিন্তু সাইমনির মাথার ঘোর যেন কাটছে নাচিন্তায় নিজে কি খাবে , মেয়েকে কি খাওয়াবে ভেবে পায় না প্রতিবেশি রহিমের মা এসে খাবার জন্য ডেকে নিয়ে যায় সাইমনি খেতে খেতে উপায় খোজে খাওয়া শেষে সাইমনি  মেয়েকে রহিমের মায়ের কাছে রেখে কাজের খোজে পাশের গ্রামে যায় এক পরিচিত গৃহস্থের বাড়িতে গৃহস্থের বউ সাইমনির সব কথা শুনে থাকা খাওয়ার বিনিময়ে জি এর কাজ দেয় তারপর সাইমনি তার মেয়েকে নিয়ে গৃহস্থের বাড়িতে আশ্রয় নেয় তার মাথায় একটায় চিন্তা খাওয়ার ব্যবস্থা হলেও তার কোনো স্থায়ী মাথা গুজার আশ্রয় নেই একদিন সাইমনি টিভিতে খবরে শুনতে পায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বাংলাদেশে একটি মানুষ গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না একথা শুনে সাইমনির মনে আশার সঞ্চার হয় যে, আমি তাহলে এবার একটা ঘর পাব তারপর সাইমনি গ্রামের মেম্বার এর কাছে গেলে, মেম্বার সাহেব তাকে গৃহহীন একটি আবেদন নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাযালয়ে জমা দিতে বলে কিছুদিন পর উপজেলা প্রশাসন . শতক জমিসহ ঘর প্রদান করে ঘর পেল, আশ্রয় হল, মাথা গুজার ঠায় পেল এবার শুরু হলো সাইমনির বদলে যাওয়ার পালা আস্তে আস্তে মেয়ের বয়স বছর হলো সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে সাইমনি, তার মাথায় একটা চিন্তা আমি অবহেলিত হয়েছি কিন্তু আমার মেয়েকে হতে দিব না মেয়েকে মানুষ করব, তাই সে তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করে দেয় সে তার ঘরের পাশে খালি জায়গায় শাক-সবজি চাষাবাদ করে হাস-মুরগি লালন পালন করে নিজে খাওয়ার পরও অতিরিক্ত বেচে যাওয়া সবিজ বাজারে বিক্রি করে এভাবে চলতে থাকে মা-মেয়ের সংসার মেয়ে এবার পঞ্চম শ্রেণীবৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, তিন মাস পর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় হেড মাস্টার ছুটে আসে সাইমনির ঘরে কিছু উপহার নিয়ে সাথে কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ তারা জানতে চায় এত দরিদ্রতার মাঝেও কিভাবে মেয়ে এত ভাল ফলাফল পেল তারা সাইমনির কাছে তার জীবনের ঘটে যাওয়ার সকল ঘটনা বলল সাইমনির কথা শুনে সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে বার বার চোখ মুছতে থাকেসাইমনি তার  জীবন বদলে যাওয়ার মুহূর্তটি ছিল একটি মাত্র ঘর সাইমনি স্মরণ করলেন তার আশ্রয় দাতা, যিনি তাকে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর প্রদান করেছেন সেই দাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে সাইমনি বলে ঘর  না পেলে আজ আমার মেয়ে পযন্ত আসতে পারত না, আপনারাও আমার বাড়িতে উপহার নিয়ে আসতেন না স্যার এখন আমি আমার মেয়েকে আপনাদের মতো করে গড়ে তুলতে চায় আমাদের জন্য আপনারা দোয়া করবে