• বিভাগঃ ঢাকা
  • জেলাঃ গোপালগঞ্জ
  • উপজেলাঃ গোপালগঞ্জ সদর
  • পৌরসভা/ইউনিয়নঃ পাইককান্দি

ভোরের আলো ফোটার আগেই গগণবিদারি আর্তনাদ। কোন মতে বালিশ-কাথাটুকুই বের করা গেছে। আর সব মধুমতির করাল গ্রামে। মুষলধারে বৃষ্টি যেন থামছেইনা তার মধ্যেই স্কুলের বারান্দায় হাঁড়ি-কুড়ি নিয়ে আশ্রয় নিতে হলো। স্কুলে আর কতদিন থাকা যায়। স্কুল কমিটির বাঁধার মুখে আবারো মধুমতির পাড়ে। এ জায়গায় ৫/৬ বছর আগে ভেঙ্গে ছিল এখন কিছুটা চর পড়েছিল। পলিথিন আর সিমেন্টের ব্যাগ দিয়ে তৈরী হলো ছাপড়া ঘর। ২ ছেলের পরে এ ঝুঁপড়িতে জন্ম হলো ছোট ছেলের। মাছ ধরা আর বেচা। কোন মতে একবেলা খেয়ে দিন কাটে। গত মাসে জায়গার মালিক এসে শাসিয়ে গেছে। এ জায়গা হতে এক মাসের মধ্যে চলে যেতে হবে। কোথায় যাবে কী করবে তা জানে না কবির মোল্যা ও তার স্ত্রী আদরী। সবাই পরামর্শ দিত ঢাকা চলে যাওয়ার জন্য। কখনোই গ্রাম ছেড়ে যেতে চায়নি তার মন।

মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জায়গাসহ পাকা ঘর দিবে। ভূমি অফিস থেকে বাছাই শেষে ১০ দিনের মাথায় ঘর পেয়ে যায়। কী সুন্দর ঘর। বড় ছেলেটি ক্লাসে ফোরে পড়ে। প্রথম রাতে সে একাধিক বার ঘুম থেকে উঠে ওর মাকে বলে মা সত্যিই আমাদের নিজেদের বাড়ি!  এ স্বপ্ন না তো!

বাড়ি ঘর অনেকেরই আছে তাদের কেমন লাগে তা তারাই জানে। তবে কবিরের মনে আনন্দের জোয়ার বইছে। আগে মাছ যা পেত এখন তার চেয়ে বেশী পায় কেন তা সে জানেনা। স্থানীয় দুটি হাটে মাছ বিক্রি করছে নিয়মিত। একসাথে বেশী মাছ কিনতে পারলে পরতা ভালো পড়ে। তাই এখন পেটিধরে মাছ কিনছে। আয়-রোজগার বেশ ভালো। ছাগল কিনেছিল ২ টি। তন্মধ্যে ১ টিতে ৩ টি বাচ্চা দিয়েছে। বাচ্চাদের খাবার পরে আধা কেজির মতো দৈনিক দুধ পাচ্ছে। ছেলেটি ভালো রেজাল্ট করছে। সামুদ্রিক মাছ বিক্রির জন্য বড় ভ্যান কিনেছে। ছোট ছেলে দুটোকে আরবী পড়াচ্ছে। আম, আমড়া,কাঠালের গাছ লাগিয়েছে। ধুন্দল আর লাউ গাছের তরতাজা ডগা এক মাচা ছেড়ে অন্য মাচা মাড়াচ্ছে। 

কবির বাজারে স্থায়ী শেড পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। তাড়াতাড়ি  শেড পাবে বলে চেয়ারম্যান কথা দিয়েছে। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ফ্যানের নীচে শুয়ে ভবিষ্যতে সে মাছের আড়ৎ দেয়ার স্বপ্ন দেখছে।