• বিভাগঃ ঢাকা
  • জেলাঃ গোপালগঞ্জ
  • উপজেলাঃ গোপালগঞ্জ সদর
  • পৌরসভা/ইউনিয়নঃ হরিদাসপুর

শেফালী ভট্টাচার্য্য। পিতা মনি মোহন ভট্টাচার্য্য। মাতা পারুল। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলাধীন ১১ নং হরিদাসপুর ইউনিয়নের খাগাইল গ্রামে জন্ম। শেফালীদের সংসারে মা-বাবাসহ তিন জন। শেফালী একমাত্র কন্যা সন্তান। সংসারে মাথা গোঁজার মত ছিল তিন শতাংশ জমির উপর একটা টিনের কাঁচা ঘর। বাবা-মা’র একমাত্র সহায়-সম্বল ঐ টুকু ভিটে-মাটি আর টিনের ঘর। তবু, বাবা-মা শেফালীকে লেখা-পড়া শেখাতে কার্পণ্য করেনি। গ্রামের প্রাইমারী শিক্ষা শেষ করে সে হাইস্কুল লেভেলও শেষ করেছে। সবেমাত্র গোপালগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচ.এস.সি পাশ করেছে। এ মূহুর্তে, বিয়ের প্রস্তাব আসে।  শেফালীরই ক্লাসমেট, নাম কমল মজুমদার। বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার বিশরখোলা  বাগেরহাটগ্রামে। বিয়ে হয়। কালের ¯্রােতে শেফালীর জীবনে দেখা দেয় এক অনিশ্চিৎ ভবিষ্যৎ। সংসারে পুত্র সন্তান না থাকায় বাবা-মা’র পাশে দাঁড়ানোর মতো আর কোন সম্বল না-থাকায় বসবাসের ভিটে-মাটিটুকুও শেষ-মেষ বিক্রি করে দেয় শেফালী’র বাবা-মা। শর্ত-আমৃত্যু থাকতে পারবেন ঐ বাড়িতে। এরই মাঝে শ্বশুর বাড়িতে শরতের এক শুভ্র সকালে শেফালীর কোলজুড়ে আসে এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান। নাম সকাল মজুমদার। সন্তান জন্মের এক বছরের মাথায় স্বামী ছেড়ে চলে যায়। সে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে আজ অবধি খোঁজ-খবর নাই। এদেশের হিন্দু সমাজে মেয়েদের বিয়ের পরে বাবার বাড়িতে আর কোন অধিকার থাকেনা। তারপরও শত ব্যাথা বুকে জমা করে নিরাপদ আশ্রয় মনে করে ফিরে আসে বাবা-মায়ের কাছে। একোতো বাবা-মায়ের করুণ অবস্থা, তারপর শেফালী আর তার সদ্যজাত সন্তান, যেন বোঝার উপর শাকের আঁটি। এ অবস্থায়, চলে আসে ভেড়ার বাজার। একটা ছোট্ট খুপড়ি-ঘর মাসিক সাতশত টাকায় ভাড়া নেয়। কোলের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি টিউশনি করা শুরু করে। প্রায় দুই হাজার টাকার একটা সংস্থান হয়। বাসাভাড়া, ছেলের দুধ কেনা এসব দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। বাসাভাড়া আজ পনেরশ টাকায় এসে পৌছেছে। এর মধ্য দিয়ে শেফালী তার ছেলেকে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু কলেজে ভর্তি করেছে। সে এখন দ্বাদশ শ্রেণিতে মানবিক শাখায় ফাইনাল পরীক্ষার্থী। ছেলের কলেজের লেখাপড়া, বাসাভাড়া আর সংসার চালানোর খরচ পুষিয়ে নিতে তাকে আরো টিউশনির সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। আজ সতেরটি বছর ধরে জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন শেফালী। তার আশা, নিজের একটা বসবাসের জায়গা আর লেখাপড়া শেষে ছেলের একটা ভাল চাকুরী। এরপর বিশ্রাম নিবে শেফালী।

অভাব আর লাঞ্ছনা-গঞ্জনাকে সহ্য করে এগিয়ে যায় শেফালীর সংসার। টিউশনির স্বল্প আয় দিয়ে ছেলের লেখাপড়া, আর সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে যখন ঝিমিয়ে পড়ছিলো শেফালী, তখনি শেফালীর জীবনে সুখের বারতা নিয়ে আসে টিভির একটি সংবাদ। এবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের উদ্বোধণী ভাষণে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘বাংলাদেশের একটি লোকও আর গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবেনা।’’ ঝিলিক দিয়ে ওঠে শেফালী’র চোখের কোণের হিমায়িত স্বপ্ন। দ্বিতীয় পর্যায়ে বরাদ্দকৃত গৃহের মধ্যে শেফালীও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলাধীন ১১ নং হরিদাসপুর ইউনিয়নের ৪১ নং বাদে খাগাইল মৌজার বি.আর.এস ০১ নং খাস খতিয়ানের ৮৫২ নং দাগে (মালেঙ্গা নামক প্রকল্পে) দুই শতাংশ জমিসহ একটা আধা-পাকা টিনের ঘর দলিলসহ পেয়ে যায়। শেফালী আবেগে কেঁদে ওঠে। এ যে কান্না নয়, স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপ। এবার বুঝি তার জীবনের স্বপ্নগুলো একে একে পূরণ হতে চলেছে। তার প্রত্যাশা এতিম ছেলে সকাল মজুমদারের শিক্ষাজীবন শেষে একটা চাকুরী।  তাই, মহিয়সী নারী, মমতাময়ী মা, মানবতার মা-হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি , বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট শেফালী ভট্টাচার্য্যের স্বপ্নপূরণের শেষ আকুতি ও প্রত্যাশা ‘‘ তার এতিম ছেলে সকাল মজুমদারের শিক্ষাজীবন শেষে একটা চাকুরী।” শেফালীদের মত অযুত-নিযুত শেফালীদের বিশ্বাস ও আশ্রয়ের বাতিঘর হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আল্লাহ যেন তাকে নেক হায়াত দান করেন এবং শেফালীর মত লক্ষ লক্ষ লোকের স্বপ্নপূরণের বাতিঘর হয়ে থাকে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ চিরজীবি হোক।’’