• বিভাগঃ ঢাকা
  • জেলাঃ গোপালগঞ্জ
  • উপজেলাঃ গোপালগঞ্জ সদর
  • পৌরসভা/ইউনিয়নঃ উলপুর

বৌলতলী ইউনিয়নের কলপুর গ্রামে সাফায়েত হোসেন ও করিমুন্নেছা দম্পতির বসবাস। একে একে সাত সন্তানের জন্ম দেন তারা। তাদের সপ্তম সন্তান হিসেবে জন্ম হয় শিশু লোবার। লোবা তার অন্য ভাই-বোনদের মতো করে বেড়ে উঠতে থাকে। নয় বছরে যখন লোবার পদার্পণ তখন ঘটে লোবার জীবনের ছন্দপতন। অমানিশা কালাজ্বর লোবার বাকশক্তি কেড়ে নেয় সাথে শ্রবণ শক্তিও কমে যায়।

শুরু হয় লোবার জীবনে অশুভ সূচনা। একে একে তার বোনদের বিয়ে হয়ে যায়, ভাইয়েরা ও বিয়ে করে নেয় । ভাইদের সংসারে সে একটা বোঝায় পরিণত হয়। তার বাবা মা লোবাকে পাত্রস্থ করার চেষ্টা করলেও বারে বারে ব্যর্থ হয়। অবশেষে পাশের গ্রামের রহিজ মোল্লার সাথে বিয়ে হয়। সে ভেবে ছিল হয়তো তার সমস্যা বোধয় কমল কিন্তু না বিধি বাম সেখানে সে আরও বেশি অন্ধকারে জীবন কাটতে শুরু করে ।

সে বোবা বিধায় রহিজের বাবা-মা, ভাই-বোন তাকে মেনে নেয় না। লোবা আবার তার নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারে না। সে শ্বশুর বাড়িতে নির্যাতিত হতে থাকে । এরই মধ্যে সে পর পর তিন সন্তানের জননী হয়ে যায়। লোবা শ্বশুর বাড়ির  নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তার বাবার বাড়ি চলে যায় । সেখানে ও  তার ভাইয়েদের সংসারে ঠাঁই হয় না। সে কি করবে সাত পাঁচ কিছু ভেবে পায় না। কিভাবে তার শিশুদের মুখে অন্ন তুলে দিবে। পাশের বাড়ি আবুল আইচ মোল্লা নামে এক ধনাঢ্য স্কুল শিক্ষক ছিল। লোবা তার বাসায় ঝিয়ের কাজ করে। কাজ করে যে টাকা পায় তাই দিয়ে অবোধ শিশুদের নিয়ে দিনাতিপাত করে। ধীরে ধীরে তার ছেলে মেয়েরা বড় হতে থাকে। শুরু হয় লোবার জীবনের কঠিন থেকে কঠিনতর অধ্যায়।

আর্থিক অনটনে তার ছেলে মেয়েকে স্কুলের পার করাতে পেরোতে পারে নাই। এদিকে মেয়ে বড় হতে থাকে। মাথা গোঁজার ঠাই নাই। একদিন সকাল বেলা লোবা স্কুল শিক্ষকের বাসায় কাজ করতেছিল। এমন সময় স্কুল শিক্ষক আবুল আইচ মাষ্টার টেলিভিশন এর পর্দায় খবর দেখেছিলেন। টিভিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ভাষণ দেন যে তার দেশে আর কোন ভূমিহীন ও গৃহহীন লোক থাকবে না। এই ভাষণ শুনে আবুল আইচ মাষ্টার লোবাকে ইশারা ইঙ্গিতে বুঝায় যে শেখ হাসিনা লোবার মতো লক্ষ লোবাকে মাথা গোঁজার ঠাই করে দেবে। এই কথা শুনে লোবার মুখে আনন্দের হাসি ফোটে।  আবুল আইচ মাষ্টার লোবাকে নিয়ে বৌলতলী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আসে এবং লোবার সমস্যার কথা শুনে ভূমি অফিস থেকে তার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হয়। তার কিছু দিনের মধ্যেই লোবার নামে উলপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটা ঘর বরাদ্দ হয় এবং তাকে ঘরসহ ২ শতাংশ ভূমি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়া হয়। একটা ঘর তাদের জীবনটাই বদলে দিয়েছে। এখন লোবা বেগম  প্রতিদিন বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী-শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করে যাব। আল্লাহ যেন তাকে নেক হায়াত দান করেন এবং আমার মত লক্ষ লক্ষ লোকের স্বপ্নপূরণের বাতিঘর হয়ে থাকে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।’’