• বিভাগঃ ঢাকা
  • জেলাঃ গোপালগঞ্জ
  • উপজেলাঃ গোপালগঞ্জ সদর
  • পৌরসভা/ইউনিয়নঃ উলপুর

জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মধুমতি নদীর পাড় ঘেঁষে ছোট্ট একটা গ্রাম উলপুর। মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি যেন এই গ্রামের মানুষকে প্রতিদিন নতুন করে কাজ করার শক্তি ও সাহস যোগায়। এখানকার প্রাচীন জমিদার বাড়ীর জন্য এই গ্রামের নাম দূর দূরান্তের মানুষের মুখে মুখে। এই গ্রামেই বসবাস এক হতদরিদ্র মানুষের নাম তার সবিতা রানী। খুব অল্প বয়সেই তার বাবা তাকে বিয়ে দেয় একই গ্রামের পুলিন কুমারের সাখে। পুলিন কুমার পেশায় একজন নাপিত। পুলিন কুমার বিয়ের পর তার স্ত্রী ও মাকে নিয়েই বসবাস করত। হঠাৎ তার মা খুব অসুস্থ হলে তাকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আনা হয় সেখান থেকে ঢাকা নিতে হয়। পুলিন কুমার এই দারিদ্যতার মধ্যে এতো চিকিৎসা খরচ চালাতে গিয়ে তার বাবার  ভিটা বড়ী বিক্রি করতে বাধ্য হয়। তার মা কিছুদন পরে মারা যায় আর তার পরিবারে নেমে আসে অসীম দুঃখ। মাথা গোঁজার ঠাই টুকুও আর নাই, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে একটা বাসা ভাড়া করে থাকা শুরু করেন। পুলিন কুমার যা উপার্জন করেন তাতে সংসার চলে না তাই সবিতা রানীও অন্যের বাসায় কাজ করে, কাথা সেলাই করে কিছু রোজগার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাড়ি ভাড়া আর তাদের পরিবারের সব খরচ এই উপার্জনে চালানো প্রায় অসম্ভব।  তাইতো তাদের ঘরে দুই বেলা খাবার জোটে না, প্রায়ই তারা এক বেলা আধ পেট খেয়ে দিন অতিবাহিত করছিল। তার ছোট ছোট সন্তান দুইটাকেও তাই স্কুলে পাঠাতে পারতো না। এমন টানাপোড়েনের মধ্যে সংসারে প্রাই অশান্তি লেগেই থাকতো।

একদিন পুলিন কুমারের কাছে চুল কাটতে এসে গ্রামের লোকেরা আলোচনা করছিল মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের থাকার জন্য ঘর দিচ্ছে। সেটা শুনে পুলিন কুমার বাড়ীতে গিয়ে তার স্ত্রী সবিতাকে জানায়। সবিতা পরদিন উলপুর ভূমি অফিসে যায়, অফিস থেকে সবিতার নামে একটা আবেদন করে দেওয়া হয়। তারপর ভূমি অফিস থেকে তার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হয়। তার কিছু দিনের মধ্যেই সবিতার নামে উলপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটা ঘর বরাদ্দ হয় এবং তাকে ঘরসহ ২ শতাংশ ভূমি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়া হয়। এখন আর তাদের ঘর ভাড়া দেওয়ার দুশ্চিন্তা নেই ঘরের পাশে কলা, পেয়ারা, আম গাছ লাগিয়েছেন সবিতা। কিছুটা সবজি চাষ করেছে পাশে। এখন তার স্বামী যা উপার্জন করে তাতেই তার সংসার চলে যায় পাশাপশি সবিতাও কিছু হাঁস মুরগি পালন করে কিছু বাড়তি আয় করার চেষ্টা করে, সাথে সে একটা সেলাই মেশিন কিনেছে এনজিও থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে। গ্রামের অনেক মহিলারাই সবিতার থেকে কাঁথা সেলাই করিয়ে নেন যার থেকেও সে একটা ভালো উপার্জন করেন। এখন সে তার সন্তানদের স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন এবং স্বপ্ন দেখছেন একদিন তার সন্তানেরা মানুষের মত মানুষ হবে, তাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। সবিতা রানী ভেবে নিয়েছিলো তার দুঃখ দুর্দশা আর কোন দিন হয়তো ঘুচবে না। কিন্তু একটা ঘর তাদের জীবনটাই বদলে দিয়েছে এখন তার পরিবারের খরচ মিটিয়ে কিছু অর্থ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে সক্ষম হচ্ছেন এটা বলতে গিয়ে খুশিতে সে কেঁদে ফেললো আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য তার সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে লাগলো।