• বিভাগঃ রাজশাহী
  • জেলাঃ পাবনা
  • উপজেলাঃ চাটমোহর
  • পৌরসভা/ইউনিয়নঃ গুনাইগাছা

বদলে যাওয়ার গল্প

 কমেদ আলী  (৫১বছর) পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের বাসিন্দা, স্বাক্ষর জ্ঞানহীন মোঃ কমেদ আলী পেশায় অটোভ্যান চালক , স্ত্রী, প্রতিবন্ধী এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার পরিবার, দৈনিক প্রচুর পরিশ্রম করা সত্ত্বেও তার দ্বারা পরিবারের সদস্যদের ভরণ পোষণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। স্ত্রীকে কাজ নিতে হয় পার্শ্ববতী মানুষের বাসায়। ঋণ করে একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর তার সমস্যা আরও বাড়ে। একমাত্র ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ার পরিবারসহ সকলেই হতাশগ্রস্থ ছিলেন।

 

মোঃ কমেদ আলী প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার পূর্বে প্যাডেল ভ্যান চালাতেন, জমিজমা কিছুই ছিল না তার স্বল্প আয়ে দুবেলা দুমঠো ভাত জুটানো  দুরুহ ছিল । নিজের জায়গায় না থাকায় অন্যের জায়গায় বেড়ার ঘরতুলে বসবাসকালে মালিকর তাদের উঠিয়ে দিতে চাইছিলেন প্রতিনিয়ত হুমকি, অত্যাচার ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন, প্রতিনিয়ত পরিবার জন্য নিরাপত্তা হীনতায় ভুগেছেন। দুই সন্তানের জনক মোঃ কমেদ আলী অভাবের তাড়নায় অল্প বয়সেই মেয়েকে  বিয়ে দিয়েছেন , লেখা পড়ায় ভাল প্রতিবন্ধী নাইম কে লেখা পড়ার খরচ দিতে পারতেন না । ঠিকমতো যেখানে খেতে পারতেন না সেখানে নিজের মৌলিক চাহিদার কথা কখনো ভাবতেই পারেনি।

 

চাটমোহর উপজেলার শহরের নিকটবর্তী গুনাইগাছা ইউনিয়নের ছোটশালিকার মেইন রোডের ধারে বরাদ্দকৃত জমির অবস্থান। বরাদ্দকৃত জমির প্রতি শতাংশের বাজার মূল্য ২৫০০০০/- (দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা। সর্বমোট দুই শতাংশের বাজার মূল্য= ৫০০০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা।

 

 আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পাওয়ার প্রায় একবছর পরে মোঃ কমেদ আলীর পরিবারের উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমানে মোঃ কমেদ আলী একটি অটো ভ্যান কিনেছে তা চালিয়ে দৈনিক প্রায় ৫০০-৫৫০ টাকা আয় করেন। প্যাডেল চালিত ভ্যান ছেড়ে পূর্বের চেয়ে মাসিক আয় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এছাড়াও তার স্ত্রী পার্শ্ববর্তী একটি মুরগির খামারে কাজ করে মাসে ৭০০০/- টাকা আয় করেন। ঘর পাওয়ার পরে স্বামী-স্ত্রী দুজনই আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ায় তাদের পরিবারে সুখ ও সমৃদ্ধি বিরাজ করছে। শারীরিক মানসিক দুই দিক থেকেই তারা অনেক শান্তিতে আছেন। তাদের প্রতিবন্ধী ছেলে এখন দশম শ্রেণীর ছাত্র নিয়মিত স্কুলে যায়। কিছুদিন আগেও রোদ বৃষ্টি ঝড় সহ নানা প্রাকৃতিক বিপযয় , প্রতিবেশীদের লাঞ্ছনা সহ অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে তারা জীবন যাপন করেছেন কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই তাদের পরিবারে অবস্থা অনেক সুন্দর ও সুদৃঢ় হয়েছে। মোঃ কমেদ আলীর স্ত্রী মোছাঃ নাজমা খাতুন এখন হাঁসমুরগি পালন, ৩টি ছাগল পালন করেন, স্বপ্ন দেখেন আগামী দিনের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন পড়ালেখা শেষ করে ভালো একটা  চাকরি করবে।

 

এখন কেমন আছেন প্রশ্নে অশ্রুসজল চোখে মোঃ কমেদ আলীর স্ত্রী মোছাঃ নাজমা খাতুন বলেন “মনে পড়ছে সে ঝড় বৃষ্টি রাতের কথা,বৃষ্টির পানি দিয়ে ঘর ভেসে গেছে, ঝড় বৃষ্টির কারনে সারারাত জাগতে হয়েছে সবাইকে কিন্তু এখন সারারাত নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি, এর চেয়ে সুখ ও শান্তি কি হতে পারে”

 

মোঃ কমেদ আলীর ছেলে মোঃ নাঈম হোসেন সমাজকল্যাণ অধিদফতর থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন পূর্বাবস্থা চিন্তা করলে এখনও শিউরে উঠেন। পূর্বের আবাসষ্থলে বিদ্যুৎ না থাকায় রাত জেগে পড়ালেখা করতে পারত না, বই খাতা কিনে দিতে পারতেন না তার দরিদ্র বাবা। এখন বাবা-মা দুজনই উপার্জন করে যার ফলে লেখাপড়ার উপকরণ পেতে তার কোন সমস্যা হয় না। সরকার দেওয়া বিদ্যুৎ ব্যবহার করে রাত  জেগে পড়তে পারে। মোঃ নাঈম হোসেন এখন স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার, বাবা মাকে আরো সুখ ও সমৃদ্ধির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার। একমাত্র মেয়ে  ও মেয়ের জামাই এখন মোঃ কমেদ আলীর বাসায় আসলে পূর্বের ন্যায় অবহেলার পাত্র হতে হয় না, তারা এখন অনেক আদর যত্নে মেয়ের জামাইকে আপ্যায়ন করতে পারেন। পাড়া প্রতিবেশী তাদের অনেক ভালবাসেন এবং সম্মান দেয়। সামাজিক মর্যাদা আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিার আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর পাওয়ার পর থেকে মোঃ কমেদ আলী ও তার স্ত্রীর দৈনিক জীবনযাত্রায় পরিবতন এসেছে,তারা এখন ইবাদত বন্দেগী করেন এবং আল্লাহর কাছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করেন।