• বিভাগঃ রাজশাহী
  • জেলাঃ পাবনা
  • উপজেলাঃ সুজানগর
  • পৌরসভা/ইউনিয়নঃ ভায়না

আজ থেকে ২৫ বছর আগে আবু তাহের যখন বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছিল তখন বেশ কয়েকটা বিয়ে ভেঙ্গে যায় তাহেরের। তাহের সে সময় দেখতে সুন্দর ছিল। সুঠাম দেহ, রোদ্রে পোড়া, বৃষ্টিতে ভেজা শক্ত পুরুষ বলতে যা বোঝায়। কিন্তু বার বার বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছিল ভিন্ন কারণে। তাহেরের ছিল না নিজস্ব বাড়ি। পরের বাড়িতে রাখালের কাজ করত তাহের। সারাদিন কাজ করত মালিকের, বিনিময়ে তিন বেলা খাবার আর মাথা গোঁজার ঠাঁই হোত বাড়ির কোনার ঘরের বারান্দায়। এভাবেই কেঁটে যেত হররোজ। ভালোই কাঁটছিল তাহেরের কিন্তু বাঁধ সাধলো বিয়ের বেলায়। ছেলে কর্মঠ বলে প্রথমে মেয়ে পক্ষ রাজি হলেও কোথায় রাখবে তাদের মেয়েকে? এই নিয়ে ৪টি বিয়ে ভেঙ্গে গেল তার।

অবশেষে রাজী হলো সুমির বাবা। বিয়ে হলো সুমি ও আবু তাহেরের। ঠিকানা হলো সুমির বাবার বাড়িতে ঘরজামাই হিসাবে। কিন্তু ঘরজামাই থাকা একদমই পছন্দ না তাহেরের। তাছাড়া শ্বশুরও অনেক গরীব মানুষ। কোনমতো সংসার চলে তাদের। কিন্তু তাহেরের করার কিছু নেই। দারিদ্রের দুষ্টুচক্র তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে । বেরুনোর কোন রাস্তা খুঁজে পায়না তাহের। এভাবেই কেটে গেছে প্রায় পঁচিশটা বছর। মুখ তুলে তাকিয়েছে ভাগ্য বিধাতা তাইতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের মতো ভূমিহীন ও গৃহহীনদের তালিকা করে ২ শতক করে জমিসহ সেমি পাকা ঘর প্রদান করেছেন। এই ঘরের চালে শোভা পাচ্ছে শিম ও লাউয়ের গাছ। এ বছর প্রায় ৩০০০/- টাকার শিম ও লাউ বিক্রি করেছেন আবু তাহের-সুমি দম্পতি। অন্যদিকে শিমের বীজ সংগ্রহ করে রেখেছেন আবার রোপনের জন্য। হাঁস পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। এর মধ্যেই হাঁসের ডিম ফুঁটিয়ে বাচ্চা বড় করে হাঁস বিক্রয় করেছেন ২০০০/- টাকার। সেই টাকা দিয়ে ০১টি ছাগলের বাচ্চা কিনেছেন তারা। তারা এখন একজন পুরোদস্তুর কৃষক ও কৃষাণী। আবু তাহের পরের জমিতে শ্রম দেয় আর আশ্রয়ণের ঘরের আশে পাশে সবজি চাষ ও ছাগল, হাঁস পালনের মাধ্যমে তারা এখন সুখে আছেন। আশ্রয়ণের এ ঘর তাদের দারিদ্রের দুষ্টুচক্র থেকে বের হয়ে আসার পথ দেখিয়েছেন বলে মনে করেন আবু তাহের। তার স্বপ্ন! তার একটি মোটর সাইকেল হবে, সেই মোটর সাইকেল দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর উপহার যত সব আশ্রয়ণ প্রকল্প আছে, তা সে দেখবে।

তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হোক এই আমাদের প্রত্যাশা।