- বিভাগঃ রাজশাহী
- জেলাঃ পাবনা
- উপজেলাঃ সুজানগর
- পৌরসভা/ইউনিয়নঃ সাতবাড়ীয়া
শরৎতের রাত, আকাশে অগণিত তারা; তারার আলোয় আলোকিত
রাস্তা ঘাট, বাড়ী, জমিন, ধানক্ষেত, আর রত্না খাতুনের বাঁধের উপরে ভিটা। এই ভিটায় তার
কত স্বপ্ন, কত আশা। আগামী বছর সে বেগুন লাগাবে, লাউ গাছ চালার উপরে উঠে বড় বড় লাউ ঝুলে
থাকবে। কিছু সে নিজে খাবে; কিছু বিক্রি করবে আর কিছু আত্নীয়দের দিবে। বিশেষ ভাবে তামিমার
মাকে। গত বছর তামিমার মা বেশ বড়সর একটি কুমড়া পাঠিয়েছিল রত্নাকে। সে কথা কি রত্না ভুলতে
পারে! তাছাড়া আত্নয়ীরা কিছু দিলে তাদেরকেও কিছু না কিছু দিতে হয়, না হলে কি আর সম্পর্ক থাকে। একথা ভাল করেই জানে রত্না খাতুন। রোজার সময়
বেগুনের খুব দাম হয় তাছাড়া এটি খাইতেও মজা, তাই অনেক গুলো বেগুন গাছ লাগিয়েছে রত্না।
বেগুনের ভর্তা আবার বাড়ীওলার খুব পছন্দ তাছাড়া মেয়েটি আবার বেগুন, আলু দিয়ে সবজি রান্না করলে মজা করে বেশী ভাত খেতে পারে। এবার বর্ষার পানি নেমে যাওয়ায় মাটি উর্বর থাকায়
বেগুন ধরেছেও বেশ। বিক্রয় করে দুইটি পাঠি ছাগল কেনার ইচ্ছা রত্নার এই দুটি ছাগল থেকে
অনেক গুলো ছাগল হবে রত্নার। একটি দুধেলা গাভী কেনার স্বাধ মনের মধ্যে পুষে রেখেছে রত্না
খাতুন। কিন্তু কিছুতেই সে শখ আহ্লাদ পূরণ হচ্ছে না তার। এবার হয়তো হবে সে স্বপ্ন কিংবা
শখের পূরণ। কিন্তু কিভাবে হবে সে স্বপ্ন আহ্লাদের পূরণ। তারতো মাথা গোজার ঠাঁইটুকু
নাই। বাঁধের উপর একচালা ঘর। সেই ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ে বর্ষাকালে। শুধুই কি তাই- বর্ষার
পানি ঢুকে পড়ে ঘরের মধ্যে। নদীর পানি আর ঘরের
মেঝের পানি তখন একই নদীর পানি। চলাফেরা করা যায় না, রান্না করার যে কি হাল সে
একমাত্র আল্লাই জানে। আর সাপ, বিচ্ছুর ভয়ে রাতে ঘুমানোই যায় না। সেখানে সবজি বাগান,
কিংবা গাভী পালনের স্বপ্ন, সে তো দিবা স্বপ্নের মতোই স্বপ্ন। তবে সেই স্বপ্নই আজ পূরণ
হয়েছে রত্না খাতুন ও আলীম সেখ দম্পত্তির। মানানীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাছিনার কল্যাণে
আজ তার দুই শতক জমি হয়েছে, হয়েছে দুই রুমের একটি ঘর, ০১টি রান্না ঘর, বাথরুম ও বারান্দা।
তার এই ঘরের পাশে যে জমি টুকু ফাঁকা আছে, সে খানেই সে তৈরী করেছে বিভিন্ন সবজি বাগান
বিশেষ করে বেগুন গাছ। এর মধ্যেই রত্না প্রায় হাজার দুয়েক টাকার বেগুন ও অন্যান্য সবজি
বিক্রি করেছে। এটাকা দিয়ে পরিবারের জন্য একটি আলনা ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র
কিনেছে। এখন তার কোন অপূর্ণ সাধ নেই। তার পাকা
একখান ঘর আছে যেখানে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের কিংবা শীতে পরিবার নিয়ে বাস করতে পারে। একথা
গুলোই যখন রত্না বলছিল, তার ঠোঁটের কোনে লেগে ছিল প্রশান্তির হাসি।