- বিভাগঃ ঢাকা
- জেলাঃ মুন্সিগঞ্জ
- উপজেলাঃ সিরাজদিখান
- পৌরসভা/ইউনিয়নঃ বাসাইল
বদলে যাওয়ার গল্প!
জেলাঃ মুন্সীগঞ্জ
উপজেলাঃ সিরাজদিখান
উপকারভোগীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামঃ মুজিববর্ষের ঘর, গিরিগঞ্জ আশ্রয়ণ প্রকল্প, বাসাইল ইউনিয়ন,
সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ।
১. উপকারভোগীর বর্ণনাঃ শিমু আক্তার, স্বামী-
মৃত মিন্টু খান, একমাত্র ছেলেঃ মোঃ সিফাত হোসেন।
২. উপকারভোগী
পূর্বের অবস্থায় কেমন ছিলেনঃ অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসায় ভিটামাটি সব হারিয়ে প্রতিবেশীর
জরাজীর্ণ খুপরি ঘরে শিশু পুত্রসহ আশ্রয় হয় অল্প বয়সে বিধবা হওয়া শিমু আক্তারের। ঝর
বৃষ্টির দিনে সেখানে তাকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হতো। সেখানে বিদ্যুৎ, পানি, টয়লেট
এর ব্যবস্থা ছিলনা, ছিলনা ব্যক্তি স্বাধীনতা। কম বয়সে বিধবা শিমু আক্তারকে অনেক কটুক্তি
ও কুপ্রস্তাব সহ্য করতে হতো। এক কথায় অন্যের বাড়িতে শিমু আক্তারকে অভিশপ্ত জীবন কাটাতে
হতো।
৩. উপকারভোগীকে
বরাদ্দকৃত ০২ শতাংশ ভূমির বর্তমান বাজার মূল্যঃ একটি বাজার সংলগ্ন এবং ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের
নিকটবর্তী হওয়ায় বরাদ্দকৃত ০২ শতাংশ ভূমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৮,০০,০০০/- (আট
লক্ষ) টাকা। সেমিপাকা ঘরসহ তার নামে বরাদ্দকৃত ভূমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০,০০,০০০/-
(দশ লক্ষ) টাকা।
৪. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশত বার্ষিকি উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার হিসেবে ০২ শতাংশ ভূমিসহ সেমিপাকা বাড়ি পেয়ে দারুন খুশি ভূমিহীন ও গৃহহীন শিমু আক্তার এবং তার পরিবার। এই ঘর তাকে ও তার পরিবারকে অন্ধকার জীবনে আলো ফিরিয়ে দিয়েছে বলে জানান। মনোরম পরিবেশে নির্মিত এই ঘর তার জন্য এক স্বপ্নপূরী। তার এবং তার পরিবারের থাকার আর কোন চিন্তা নেই। তিনি ঘরে বসে সেলাই কাজ করেন এবং খোলায় জায়গায় লাউ, কুমড়া, বেগুন, পেপেসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন। ১৮ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে সিফাত হোসেন লেখাপড়ার পাশাপাশি মেকানিক্যাল কাজ শিখছে। সবকিছু মিলে তিনি আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো আছেন বলে জানান। সরকারি আর্থিক ও পৃষ্টপোষকতা পেলে তিনি এবং এই আশ্রয়ণে বসবাসকারি অন্যরা আরও এগিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান।
৫.
৬. ২০০৪ সালে ৮ম শ্রেণীতে
পড়াকালীন সময়ে পারিবারিকভাবে শিমু আক্তারের বিয়ে হয় প্রতিবেশী মিন্টু খান এর সাথে।
সে সময় বিয়েকে তিনি ভেবে নিয়েছিলেন বেঁচে থাকার অবলম্বন, নতুন স্বপ্ন হিসেবে। কিন্তু
তার স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হতে সময় নেয়নি। বিয়ের কয়েকবছর পরেই স্বামী মিন্টু খান অসুস্থ
হয়ে পরেন এবং একমাত্র সন্তান সিফাত হোসেন এর পাঁচ বছর বয়সে স্বামী মিন্টু খান মৃত্যুবরন
করেন। অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা করতে গিয়ে ভিটামাটি সব হারিয়ে প্রতিবেশীর জরাজীর্ণ খুপরি
ঘরে আশ্রয় নিতে হয় শিশু পুত্রসহ বিধবা শিমু আক্তারকে। একদিকে অন্ন বস্ত্রের ভাবনা,
অন্যদিকে বাসস্থান সমস্যা। তার দুচোখে রাজ্যের অন্ধকার। ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাবেন, কি
করবেন। এভাবে অন্যের বাড়িতে আশ্রিত অবস্থায় বেশ কয়েক বছর কেটে যায়। গতবছর তিনি জানতে
পারেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের
০২ শতাংশ ভূমিসহ সেমিপাকা ঘর দিবেন। তিনিও আবেদন করেন এবং ১ম ধাপে ০২ শতাংশ ভূমিসহ
মনোরম পরিবেশে সেমিপাকা গৃহ বরাদ্দ পান। তাকে বরাদ্দকৃত ভূমির কবুলিয়ত নামা ও নামজারীর
সকল কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান। তার আর বাসস্থানের চিন্তা নেই। বর্তমানে
তিনি ঘর বসে সেলাই কাজ করেন এবং বরাদ্দকৃত খোলা জায়গায় নানা ধরনের সবজি চাষ করেন। একমাত্র
সন্তান সিফাত হোসেন পড়ালেখার পাশাপাশি মেকানিক্যাল কাজ শিখছেন। বর্তমানে তিনি আগের
চেয়ে ভালো আছেন বলে জানান। তার চোখেমুখে এখন খুশির ঝলক। তিনি আরও এগিয়ে যেতে চান, স্বাবলম্বি
হতে চান। তার স্বপ্ন এখন একমাত্র ছেলে প্রতিষ্টিত করা। তিনি ও ছেলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে
তার নিজস্ব অর্থায়নে জমি কিনে বাড়ি বানাতে চান। তখন তিনি সরকারি বরাদ্দকৃত ঘর সরকার
বরাবর বুঝিয়ে দিবেন। যাতে অন্যকোন ভূমিহীন ও গৃহহীন এই ঘরে আশ্রয় নিতে পারেন। তিনি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন
এবং জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার শান্তি কামনা করেন।