• বিভাগঃ চট্টগ্রাম
  • জেলাঃ চাঁদপুর
  • উপজেলাঃ চাঁদপুর সদর
  • পৌরসভা/ইউনিয়নঃ লক্ষীপুর মডেল

নাম: লাকি বেগম (২৯)


স্বামী: মাসুদ কবিরাজ, পেশা- শ্রমিক


চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ৪৫ নং ঘরের বাসিন্দা লাকি বেগম। ৩ ভাই ২ বোনের সবার ছোট লাকি বেগম। ২০০৯ সালে বিয়ে হয় হাইমচর উপজেলার উত্তর আলগী নিবাসী মাসুদ কবিরাজের সাথে। সামাজিক রীতি অনুসারে বিয়ের পর শ^শুর বাড়ীতেই থাকতেন যৌথ পরিবারে। কিন্তু পারিবারিক টান পোড়েন, দারিদ্রতা আর জেঠা শ^শুরের অত্যাচারে দুর্বিসহ করে তুলেছিল তাদের জীবন। তাই বাধ্য হয়ে ভিটে মাটি বিক্রি করে উন্নত জীবনের স্বপ্নে বাড়ী ছাড়েন তারা। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যৌথ সংসার।


স্বামী এবং ১ সন্তান লিমন কে নিয়ে চলেযান ঢাকার শনির আখড়া এলাকায়। মাসিক ৬০০০ টাকা ভাড়ায় ১ রুমের একটি সাবলেট বাসায় শুরু করেন তাদের ছোট্ট সংসার। ছেলে লিমনকে ভর্তি করান মাদ্রাসায়। পৈত্রিক ভিটে মাটি বিক্রি করা সামান্য টাকা ও ধার করা কিছু টাকা পুঁজি নিয়ে মাসুদ শুরু করেন ফলের ব্যবসা। সাবলেট ঘর, শেয়ার করা টয়লেট আর কিচেন মিলে ভালই চলছিল তাদের জীবন।


দিন পরিবর্তনের হাওয়া যখনি বইতে শুরু করলো ঠিক তখনি পৃথিবী ব্যাপী শুরু হলো কোভিড-১৯। প্রথমে সীমিত জীবন যাপন তারপর লকডাউন। চারিদিকে যেন ঘন অন্ধকার নেমে এলো তাদের জীবনে। অবিক্রিত ফলগুলো চোখের সামনেই পঁচতে শুরু করলো। বিক্রি নাই, আয়ের রাস্তায় লকডাউন, মাস শেষে ঘর ভাড়া, পাওনা দারের তাগিদ সব মিলিয়ে সীমাহীন দুর্দশায় জীবন পর্যুদস্ত। বাধ্য হয়েই ঢাকা ছাড়ার তাগিদ! কিন্তু যাবে কোথায়? নিজের তো কোন ঠিকানা নাই। ইতিমধ্যে তাদের ঘরে নতুন অতিথি এক মাত্র কন্যা সন্তান সুমাইয়ার আগমন। অবশেষে লাকি বেগমের ঠাঁই হলো তার গরীব বড় ভাইয়ের কুটিরে। বন্ধ হয়ে গেলো ছেলের লেখাপড়া। ২ সন্তানকে নিয়ে লাকি বেগম চলে এলেন এ জেলার লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে তার পৈত্রিক বাড়িতে।


দিন এনে দিন খাওয়া ভাইয়ের ঘরে উপযাচকের মতো ২ সন্তানকে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনে লাকি বেগম অপরদিকে জীবন সংগ্রামে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় ঠাঁই নেয় মাসুদ। আত্মীয়ের সহযোগিতায় সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে আবার শুরু করেন ফুটপাথে সবজীর ব্যবসা। এমন সময় লাকি বেগমের ভাই জানতে পারলো মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ‚মিহীনদের ঘর উপহার দিবেন।


 প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন লাকি বেগম নানান যাচাই বাছাই শেষে চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাকি বেগমের হাতে পৌঁছে দেয়া হলো তার স্বপ্নের ঠিকানা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ৪৫ নং বাড়ীটি। মাসুদ কবিরাজ চলে এলেন স্ত্রী সন্তানের কাছে। স্বামী ও ২ সন্তানকে নিয়ে লাকি বেগম বেঁধেছেন সুখের ঠিকানা। পেয়েছেন নিজের একটা ঘর, নিজের ঠিকানা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ২ শতাংশ জমির বর্তমান আনুমানিক মূল্য ঘরসহ প্রায় ০৫(পাঁচ) লাখ টাকাসহ অন্যান্য সম্পদের পরিমান প্রায় ১০ (দশ) লক্ষ টাকা  । 


 বদলে গেল তাদের জীবন। মাসুদ কবিরাজ এলাকায় দিনমজুরের কাজ করেন, সংসারে সময় দেন। লাকি বেগম ঘরের কাজ সমালে বাড়ীর আঙ্গীনায় বিভিন্ন সব্জির আবাদ করেন। বড় সন্তানকে আবার ভর্তি করিয়েছেন মাদ্রাসায় সে এখন ৩য় শ্রেণীর ছাত্র। বাসা ভাড়ার দায় নেই। মাস শেষে সংসার খরচ মিটিয়ে এখন তাদের মাসিক সঞ্চয় ২০০০/- করে। এই সঞ্চয়কে ঘিরে এখন সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্নবুনেন মাসুদ কবিরাজ ও লাকি বেগম দম্পতি।


ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।