
জন্মের
পর থেকে ৩২ বছরের জীবন কেটেছে অন্যের বাড়িতে। জীর্ণ কুটিরে রোদে পুরেছে বৃষ্টিতে
ভিজেছে আবার শীতেও কষ্ট করেছে। ১২ বছর আগে বিয়ে হয়ে স্বামীর সংসারে এসেও
না ছিল কোনো স্থায়ী ঠিকানা, না ছিল নিজের কোনো জমি ও থাকার মতো ঘর। নিজের কোন ঘর
না থাকায় নিদারুণ কষ্টে দিনপার করেছে। এখন আর সেই জীর্ণ কুটিরে দুর্ভোগ পোহাতে
হবে না। শুধু ঘর নয়, নিজের নামে ২ শতক জমির মালিকানা হয়েছে তাদের। পূরণ হয়েছে
অপ্রত্যাশিত স্বপ্ন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা দক্ষিণ
ইউনিয়নের সাতপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে শুক্রবার (২১ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টায় নিজের ঘরে
সেলাই মেশিনে নিজের মেয়ের জন্য ঈদে নতুন জামা সেলাই করার সময় কথা গুলো বলছিলেন ৩২
বছর বয়সী দুই সন্তানের জননী অঞ্জনা বেগম। এবার ঈদে তাদের আনন্দে শেষ নেই জীবনে
প্রথম নিজের বাড়িতে রঙিন টিনের পাকা ঘরে ঈদ করবেন তিনি ও তার মত এই প্রকল্পে ঘর
পাওয়া ২১ টি পরিবার। তাই তাদের ঈদটাও রঙিন। জীবনে প্রথম নিজের বাড়িতে রঙিন টিনের পাকা ঘরে ঈদ অঞ্জনা বেগম আরও বলেন নিজে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেও তার
মেয়েদের তিনি পড়া লেখা শিখিয়ে স্বাবলম্বী করতে পিছপা হবে না। সে সুযোগটা এখন বেশি
হয়েছে নিজের ঘর হওয়ার। অঞ্জনা বেগমের বড় মেয়ে পড়ের আখাউড়ার স্বনামধন্য শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান নাসরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে আর ছোট মেয়ে
পড়ে একটি মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে। স্বামী মনির হোসেন পেশায় অটোরিকশা চালক। এসময়
এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া অন্যান্য উপকারভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যারা
ঘর পেয়েছেন তারা জীবন সংগ্রামে অসহায় ও মানবেতর দিন যাপন করতেন। প্রধানমন্ত্রীর
উপহার এসব বাড়ি পেয়ে দূর্বীষহ জীবনের ইতি টেনে নতুন জীবনের সঞ্চার হয়েছে। কল্পনাও
করেননি এরকম রঙিন টিনের পাকা ঘর পাবেন। যেখানে জীবন কেটেছে অন্য বাড়ির বারান্দায়
কিংবা মেঝেতে। আজ উঠেছেন পাকা ঘরে। আকাশ কুসুম কল্পনার বাস্তবায়ন ঘটেছে তাদের। ঘর
পেয়ে নিজেদের মতো সাজিয়ে নিচ্ছেন এসব ঘর। নতুন বাড়িতে অনেকেই হাঁস-মুরগি, সবজি চাষ
করে সুন্দর জীবনের গল্প বুনছেন তারা। চলতি বছরের ২২ মার্চ আখাউড়া উপজেলায় ৪র্থ পর্যায়ে
৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দলিল হস্তান্তর করাসহ এ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় মোট ৬৬৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে জমিসহ পাকা ঘর
দেওয়া হয়েছে।এবং আখাউড়াকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়