• বিভাগঃ ঢাকা
  • জেলাঃ গোপালগঞ্জ
  • উপজেলাঃ গোপালগঞ্জ সদর

ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে তারা মিয়া। পূর্ব গোপালগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম শিবপুরের অজিত সিকদারের সন্তান তারা মিয়া। ছোট বেলা থেকেই সে একটু ডানপিটে স্বভাবের। বাপের দারিদ্যতার কারণে প্রাথমিকের গ-ি ছাড়াতে পারেনি সে। চটপটে স্বভাবের হলেও সংসারের জোয়াল ঘাড়ে চেপেছিল সেই ছোটবেলাতেই। অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানোই দায়। টানা-পোড়েনের সংসারে খরচ চালাতে বাড়ে ঋণের বোঝা। বাবা অজিত শিকদার ভিটে-বাড়ী বিক্রি করে সেই দেনা শোধ করে। ভিটে-মাটি হারা হয়ে ভাগ্যের অন্বেষণে তারা মিয়া শহরে চলে যায়। আপাদমস্তক  গ্রাম্য তারা মিয়া শহরে এসে আবিষ্কার করে, এত আলো ঝলমলে শহরে সবকিছু শুধু দেখাই যায় মন ভরে কিন্তু স্পর্শ করা যায়না। এমনকি পিঠ পেতে শোয়ার মত একটুকরো জায়গাও তার নেই।

প্রথম কয়েকদিন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটে তার। এরই মধ্যে তারা মিয়ার একটি কাজ জুটে যায়। স্টিলের আলমিরা, বাক্স তৈরী’র কাজ পায় তারা মিয়া। যদিও আগেই তার এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ছিল। সাতশত টাকা ভাড়ায় একটি ঝুপড়ি ঘর ঠিক করে। জীবনের একটি বাঁকে এসে হোচট খায় তারা মিয়া। এক ছেলে এক মেয়ে তার। মেয়েটি বড়। বিয়ের উপযুক্ত। সম্বন্ধ ঠিক হয়। আবার ভেঙ্গেও যায়। বাস্তুভিটাহীন পিতার কন্যা কেউ বিবাহ করতে চায়না। যে দু’ একজন আগ্রহ দেখায়, পিছে মোটা অংকের যৌতুক চায়। যৌতুক দিয়ে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি নয় তারা মিয়া। আর দিবেইবা কোত্থেকে।

মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দেশের একটি লোকও গৃহহীন ও ভূমিহীন না রাখার প্রত্যয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সারাদেশে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে জমি ও ঘর প্রদানের যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন, সেই কার্যক্রমের আওতায় চরমানিকদাহ আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুই শতাংশ জমিসহ একটি আধা-পাকা লাল টিনের ঘর পেয়ে যায় তারা মিয়া। তারা মিয়ার চোখে-মুখে যেন স্বপ্নপূরণের হাসি। নিজের একটি

বাড়ী, স্থায়ী ঠিকানা। তাই তারামিয়া অল্প দিনেই তার ঘরের চারপাশ ও আঙ্গিনা বিভিন্ন ফল, ফুলের গাছ দিয়ে সাজিয়ে তোলে। তারা মিয়া নতুন একটি পরিচয় পায়। তার নামের আগে ভূমিহীন বা গৃহহীন কথাটি মুছে যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে। তার সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। মেয়ের জন্য এখন ভাল ঘর থেকে প্রস্তাব আসে। একটা ভাল ছেলেও পেয়ে যায়। এবার আর হাতছাড়া নয়। কেননা মেয়েটি যেন তার ধেঁই ধেঁই করে তালগাছের মত বেড়ে উঠছে। মা-মরা মেয়ে। তাই, মেয়েকে নিয়ে তারা মিয়ার চিন্তাটা একটু বেশীই। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তারা মিয়া যেন একা হয়ে যায়। ক’দিন সে ঠিকমত কাজেও যায়নি। তবে সে জানতে পারে শ^শুর বাড়ীতে অভাব নাই। মেয়ে তার সুখেই আছে। কন্যাদায়গস্ত পিতার চিন্তার অবসান ঘটে। এখন, সংসারে তারা মিয়া আর তার ছেলে রবিন। রবিন আর তারামিয়া দু’জনেই শহরের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করে। দু’জনে ভাল মাইনে পায়। সংসার চালানোর পরও তাদের ভাল একটা সঞ্চয় থাকে। তারা মিয়া স্বপ্ন দেখে, ‘‘নিজের কাজের অভিজ্ঞতা আর রবিনের শ্রম দিয়ে বাপ-ছেলে নিজেরাই একটা ওয়ার্কশপ গড়ে তুলবে।’’ সেদিন আর বেশী দূরে নয়। ইতোমধ্যে একটা এনজিওর সাথে কথাও হয়েছে। তারা স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে তারা মিয়াকে স্বাবলম্বী করতে আগ্রহ দেখিয়েছে।