• বিভাগঃ রাজশাহী
  • জেলাঃ পাবনা
  • উপজেলাঃ পাবনা সদর
  • পৌরসভা/ইউনিয়নঃ হেমায়েতপুর

জেলা: পাবনা 

থানা :পাবনা সদর 

ইউনিয়ন : দোগাছী।

গ্রাম:হেমায়েতপুর। 

উপকারভোগীর নাম :মোসা: মিতু।(তৃতীয় লিঙ্গ)

ভোটার আইডি নাম:মো: মৃদুল প্রামানিক।

ফোন নং : ০১৭৫৪-৮৯৮৪৮৫.


শুরুর জীবন:

মিতু খাতুন। একজন তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি।জন্মের পর থেকেই সামাজিক পারিবারিকভাবে  তিনি নাজেহাল হয়ে আসছেন। যেখানেই যেতেন যেন একটি গল্পের শিরোনাম হয়ে যেতেন তিনি।সবাই দেখে চোখ টিটকারি মারতো এবং অবজ্ঞা অবহেলা করত। পরিবারের সবাই কোথাও বেড়াতে গেলে তাকে কখনোই সঙ্গে নেওয়া হতো না। পরিবারের সবার জন্য কোন পোশাক কিনলে তার জন্য কেনা হতো না। তাকে সঠিক সময়েই স্কুলেও ভর্তি করা হয়নি। মা বাবা ভাই বোন আত্মীয়স্বজন সকলেই যেন একটা ব্যঙ্গ বিদ্রুপের নজরে তাকে দেখতো। কিন্তু এই যে তৃতীয় লিঙ্গ হয়ে জন্মগ্রহণ করা এটা তো তার অপরাধ নয়। কিন্তু এ বিষয়টি সে যেন কাউকে বলতে পারতো না। দিনের পর দিন গুমড়ে গুমড়ে কেঁদেছে। একসময় এসে পরিবার আর তার দায়িত্ব নিতে চাইনি। বাবা-মার সম্পত্তি থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাস্তাঘাটে বের হলে তাকে অপমান করা হয়েছে। জীবনের এমন কঠিন বাস্তবতার সময়ে তার পাশে এসে কেউ দাঁড়ায়নাই।কোন এক সময় তার মনে হয়েছিল তিনি আত্মহত্যা করবেন। আত্মীয় পরিজন নেই, থাকার ঘর নেই, মাথায় হাত বোলানোর লোক নেই, ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে তিনি মহাপাপ করেছেন। এভাবেই চলছিল মিতুর জীবন। 


আশ্রায়নের ছায়া:


ঠিক সে সময় পাবনা সদর উপজেলার কয়েকজন অফিসারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। উনারা তাকে আশ্রয়ন সম্পর্কে বলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার  সাথে তারা দেখা করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে আশ্বস্ত করেন যে তাকে অবশ্যই ঘর দেওয়া হবে। তবে মিতু কে শুধু ঘর দিলে তো হবে না তার কর্মেরও একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আর তার কর্মের জন্য পাশে এসে দাঁড়ায় উপজেলার বেশ কয়েকটি দপ্তর। সমবায়  থেকে তাকে একটি সমবায়ের দর্জি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে লোন দেওয়া হয়, এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার জননীর আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে তাকে ০২ (দুই) শতক জমি, একটি ঘর দেওয়া হয়।যেদিন মিতু ঘর পান সেদিন মিতুর আনন্দ যেন ধরেনা।আনন্দে আকাশ বাতাস ভারী করেছিল মিতু। এভাবেই মিতুর জীবনের বদলে যাওয়ার গল্পের শুরু। 


বদলে যাওয়া দিন:


যখন মিতুর ঘর ছিল না তখন ভাড়া বাসায় প্রচন্ড আতঙ্কে থাকে দিনযাপন করতে হতো। প্রতিবেশী ভাড়াটিয়ারা তাকে অনেক সময় গায়ে হাত তুলেছে। মন খুলে যেন হাসতে ভুলে গিয়েছিল মিতু। কিন্তু যখন নিজের একটি ঘর হল পৃথিবীর সমস্ত সুখ যেন মিতুর কাছে ধরা দিল। 

নিজের ঘর নিজের থাকার একটি জায়গা মাথার উপর একটি ছায়ার তার বড় অভাব ছিল। এখন সে নিজের বাড়িতে থাকে আয় রোজগার করে গরুও ছাগল পালন করে দর্জির কাজ করে। মিতু এখন স্বাবলম্বী। 

তার নিজের ভাষ্য অনুযায়ী কথাটা এমন ---"যে জন্ম দিয়েছে সে আমাকে সম্মান দেয়নি সে আমাকে ঘর দেয়নি কিন্তু মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বাসস্থান দিয়েছেন।আমাকে সামাজিক স্বীকৃতি দিয়েছেন। জীবনে এর চেয়ে সুখের বদলে যাওয়া আর নেই।