প্রকাশের তারিখ : ২১ মার্চ ২০২৩

বদলে যাওয়া এক গ্রাম– নয়াপাড়া। তবে এর বাসিন্দারা বলছেন, এটি গ্রামের ভেতর এক খণ্ড শহর। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে গ্রামের ভেতর গড়ে তোলা হয়েছে এ গ্রাম। অন্যান্য অনেক আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে এটি বেশ আলাদা। এখানে তৈরি করা হয়েছে একাধিক প্রশস্ত রাস্তা, মসজিদ, স্কুল, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, পুকুর, কবরস্থানসহ নানা নাগরিক সুবিধা।

ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি ঘরবাড়িতে এখানে ১৪২টি পরিবারের আশ্রয় হয়েছে। তাদের মাঝে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের ঢেউ। এখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়া মানুষদের জীবনযাপনের ধরনও বদলে গেছে। শিল্প অধ্যুষিত এলাকার ভেতর সবুজ নিষ্কণ্টক প্রকৃতির সান্নিধ্যে গড়ে তোলা এ নতুন গ্রাম সন্ধ্যা হলেই বিদ্যুতের আলোয় ঝলমলে হয়ে ওঠে।

শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামে প্রায় ২৪ বিঘা জমির ওপর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় দৃষ্টিনন্দন এ প্রকল্পে সুপেয় পানির ব্যবস্থা ছাড়াও প্রতিটি ঘরে রয়েছে আলাদা বাথরুম ও বারান্দা। ভিটে-মাটিহীন, বিধবা, ভিক্ষুক কিংবা সমাজের সব হারানো নারী-পুরুষকে লিখে দেওয়া হয়েছে জমিসহ ঘরগুলো।ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনা বাজার থেকে সাড়ে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে নয়াপাড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে নতুন গ্রামটি। সোমবার দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সরকারিভাবে বুঝিয়ে দেওয়া ১৪২টি পরিবারই আশ্রয় নিয়েছে। কেউ রান্না করছেন, কেউ সেরে নিচ্ছেন গোসল। কেউ আবার পরিষ্কার করছেন ঘর।

এখানে ঠাঁই পাওয়া সাবজান বেগম শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বলেন,  ‘স্বামীকে হারিয়েছি অনেক আগেই। একটা পোলা আছিল, সেও ফাঁকি দিয়া চইল্যা গেছে পরপারে। আপন বলতে আমার কেউ নাই। আমি আছিলাম পথের মানুষ। যেখানে রাইত অইতো, সেখানেই কাইত অইতাম। জায়গা-জমি, ঘরবাড়ি কিছুই নাই আমার। এই ঘরটা সরকার দিছে। সারা দিন ভিক্ষা কইরা অন্তত রাইতে শান্তিতে ঘুমাইতে পারুম। শেখের বেডির লাইগ্যা দোয়া করি- আল্লায় জানি তারে শান্তি দেয়।’

আমির আলী নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘এই ঘর পাইয়া মনে অইতাছে স্বাধীনতার স্বাদ পাইলাম। দেশ স্বাধীন অইছে ৫৩ বছর আগে। কিন্তু আমার স্বাধীনতা আইলো এখন। এত কাল অন্যের বাড়িতে কাটাইছি।’ জমিলা খাতুন নামে এক বাসিন্দা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় আজ আমি জমি আর ঘরের মালিক হইছি। আমার কিছুই ছিল না। এখন যেন সব আছে।’   

নতুন ওই গ্রামটি সুপরিকল্পিতভাবেই তৈরি করা হয়েছে বলে জানান গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। সমকালকে তিনি বলেন, শুধু ঘর তৈরি করেই আমরা দায়মুক্ত হয়েছি– এমন নয়। ওই গ্রামে বসবাসের প্রয়োজন– এমন সবকিছুই তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ গ্রামের আশেপাশে অন্তত ৩০টি শিল্পকারখানা রয়েছে। সেসব কারখানায় এ গ্রামের বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরির ব্যবস্থা থাকবে।  শাকসবজির আবাদ, পুকুরে মাছ চাষ, গরু-ছাগল কিংবা হাঁস-মুরগি পালনে সহযোগিতা করা হবে।
তিনি বলেন, স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পরিবারগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে প্রশাসন।  ফলদ, ভেষজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ, রাস্তার পাশে সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছ রোপণ, সোলার লাইট স্থাপন, সুপেয় পানি সরবরাহে প্রতি ১০ পরিবারের জন্য সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র কাম বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এই জায়গায় গভীর গর্ত ছিল, আশেপাশে ছিল ঝোপঝাড়। জায়গাটির উন্নয়ন করে এ গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে। 

শ্রীপুরের ইউএনও তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। কিন্তু এখানে প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ টাকার বেশি। জেলা প্রশাসকের স্থানীয় তহবিল থেকে বাকি অর্থের জোগান দেওয়া হয়েছে।  তিনি বলেন, গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বুধবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।